ভূমি কী? ভূমির বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব (What is Land, Characteristics and Importance of Land)

ভূমি কী? অর্থনীতিতে "ভূমি" বলতে সাধারণভাবে সেই সব সম্পদ বোঝায় যা সরাসরি প্রকৃতির দ্বারা প্রদান করা হয় এবং যা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভূমি অর্থনৈতিক উৎপাদন, যেমন কৃষি, নির্মাণ, খনন ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ভূমির বৈশিষ্ট্য

১। প্রকৃতির দানঃ ভূমি এমন একটি সম্পদ যা প্রকৃতির দ্বারা সরাসরি প্রদান করা হয়। এটি কোনো মানুষের সৃষ্ট নয়, বরং প্রকৃতির অবদান। যেমন: মাটির ভর, পাহাড়, নদী ইত্যাদি।

২। উৎপাদন ব্যয় নেইঃ ভূমির উৎপাদন ব্যয় নেই, অর্থাৎ ভূমি তৈরি করতে কোনো খরচ প্রয়োজন হয় না। এটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া একটি সম্পদ, যার জন্য উৎপাদনের কোন খরচ নেই।

৩। সীমিত যোগানঃ ভূমির পরিমাণ সীমিত। কোনো দেশে বা অঞ্চলে ভূমির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকে যা পরিবর্তনযোগ্য নয়। এর ফলে ভূমির দাম সাধারণত উচ্চ হয়, কারণ ভূমির যোগান সীমিত।

৪। স্থানান্তর যোগ্য নয়ঃ ভূমি স্থানান্তরযোগ্য নয়। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট জায়গার ভূমি অন্যত্র সরানো সম্ভব নয়। ভূমি শুধুমাত্র তার অবস্থানে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫। আদিম ও অক্ষয়ঃ ভূমি আদিম অর্থাৎ প্রাচীন এবং অপরিবর্তিত থাকে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে একইভাবে থাকে এবং তার চরিত্র পরিবর্তন হয় না। ভূমি অক্ষয়, অর্থাৎ এটি ব্যবহার না করলে বা ক্ষতি না হলে, তা হারায় না বা ভেঙে পড়ে না।

৬। গুনগত ভিন্নতাঃ ভূমির গুনগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হতে পারে। এক অঞ্চলের ভূমি কৃষির জন্য উপযুক্ত হতে পারে, অন্য অঞ্চলের ভূমি নির্মাণের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। ভূমির গুনগত ভিন্নতা তার বিভিন্ন ব্যবহারের সম্ভাবনা নির্ধারণ করে।

৭। ক্রমহ্রাস্মান প্রান্তিক উৎপাদন বিধির প্রভাবঃ ভূমির ক্ষেত্রে ক্রমহ্রাস্মান প্রান্তিক উৎপাদন বিধি প্রযোজ্য। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমি ব্যবহার করে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও, একদফা পরে তা কমতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ক্ষেত্রের অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করলে তা শিগগিরই ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

৮। বিকল্প ব্যবহারঃ ভূমির বিকল্প ব্যবহার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট ভূমি একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন কৃষি, শিল্প, আবাসন ইত্যাদি। ভূমির বিকল্প ব্যবহার নির্ভর করে তার গুনগত বৈশিষ্ট্যের উপর এবং তার অবস্থানের উপর।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং এর ব্যবস্থাপনা কিভাবে করা উচিত তা বোঝাতে সাহায্য করে।


ভূমির গুরুত্বঃ

ভূমি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বিভিন্ন গুরুত্ব নিম্নরূপ:

১। কৃষি উৎপাদন: ভূমি কৃষি কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। খাদ্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য উর্বর জমি প্রয়োজন। কৃষি উৎপাদনের জন্য ভূমির গুণমান সরাসরি সম্পর্কিত।

২। অবকাঠামো উন্নয়ন: শহর ও গ্রামাঞ্চলে অবকাঠামো যেমন রাস্তা, ব্রিজ, বাসভবন ইত্যাদির জন্য ভূমি প্রয়োজন। এটি উন্নয়নের জন্য মৌলিক ভিত্তি প্রদান করে।

৩। প্রাকৃতিক সম্পদ: ভূমিতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন খনিজ, তেল, গ্যাস, বন ইত্যাদি থাকে, যা অর্থনৈতিক মূল্য সংযোজন করে।

৪। পরিবেশগত সেবা: ভূমি বন, জলাশয় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য আশ্রয়স্থল সরবরাহ করে, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

৫। বাণিজ্যিক ব্যবহার: ভূমি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা ইত্যাদি।

৬। আবাসন: মানুষের বাসস্থান গড়ে তোলার জন্য ভূমি প্রয়োজন। শহর বা গ্রামে বাড়ি নির্মাণের জন্য জমির প্রয়োজন।

৭। পর্যটন: ভূমিকেন্দ্রিক পর্যটন সুবিধা যেমন পাহাড়, সমুদ্র তট, বন ইত্যাদি পর্যটকদের আকর্ষণ করে, যা স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক।

৮। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: ভূমি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার হয়। স্থানীয় সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ভূমির ভূমিকা থাকে।

৯। বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল: ভূমি বন্যপ্রাণীর বাসস্থান হিসেবে কাজ করে। বন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশ বন্যপ্রাণীর জন্য আশ্রয়স্থল প্রদান করে।

১০। ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা: সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহার পরিকল্পনা একটি দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক। এটি উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রূপরেখা প্রদান করে।

ভূমির এই বিভিন্ন গুরুত্ব অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভূমিকার মধ্যে একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post