বাংলাদেশের শ্রমিকের দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। দক্ষতা বাড়ানোর উপায়গুলোও বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়।
বাংলাদেশের শ্রমিকের দক্ষতা কম হওয়ার কারণসমূহ
১. অপর্যাপ্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: শ্রমিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব শ্রমিকদের দক্ষতা হ্রাসের একটি বড় কারণ।
২. প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব: আধুনিক প্রযুক্তি ও উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং দক্ষতার অভাব শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমায়।
৩. সর্বাধুনিক মেশিনারিজের অপ্রতুলতা: বেশিরভাগ কারখানা ও শিল্পক্ষেত্রে পুরোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়তে দেয় না।
৪. অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সুবিধা: প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর অপ্রতুলতা এবং কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভাবের কারণে শ্রমিকরা দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।
৫. স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ঘাটতি: শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাবের কারণে তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং কাজের দক্ষতা কমে যায়।
৬. দীর্ঘ কর্মঘণ্টা: দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার কারণে শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক চাপ বাড়ে, যা তাদের দক্ষতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৭. কাজের নিরাপত্তার অভাব: শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল হলে তারা অনিরাপদ বোধ করেন, যা তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ ও দক্ষতা কমিয়ে দেয়।
৮. অপর্যাপ্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা: ন্যায্য বেতন ও কর্মসংস্থানের সুবিধা না পেলে শ্রমিকদের কাজের আগ্রহ কমে যায় এবং দক্ষতা বাড়ে না।
৯. প্রতিযোগিতার অভাব: কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতার অভাবে শ্রমিকরা নিজেদের উন্নত করতে প্রণোদনা পান না, ফলে দক্ষতা স্থবির হয়ে যায়।
১০. কর্মপরিবেশের মানহীনতা: অনেক কারখানা ও শিল্পক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত কর্মপরিবেশ শ্রমিকদের মনোযোগ ও দক্ষতা হ্রাসের একটি বড় কারণ।
১১. শিক্ষানবিসির সুযোগের ঘাটতি: কর্মস্থলে শিক্ষানবিসির পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়ায় শ্রমিকরা কার্যক্ষেত্রে দক্ষ হতে পারেন না।
১২. পরিবার ও সামাজিক চাপ: পরিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বের চাপের কারণে শ্রমিকরা পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না, যা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।
১৩. মেধাবী কর্মীদের বিদেশে অভিবাসন: দক্ষ এবং মেধাবী কর্মীরা বিদেশে অভিবাসন করায় দেশের অভ্যন্তরে শ্রমশক্তির দক্ষতা হ্রাস পায়।
১৪. অপর্যাপ্ত মেন্টরিং এবং পরিচালনা: কর্মস্থলে মেন্টরিং ও সুপরিচালনার অভাব শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
১৫. কাজের স্থিতিশীলতার অভাব: কাজের স্থিতিশীলতা না থাকায় শ্রমিকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন, যা তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে বাধা দেয়।
বাংলাদেশের শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানোর উপায়সমূহ
১.মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ: শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিকদের প্রাথমিকভাবে দক্ষ করে তোলা যেতে পারে।
২. প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও উন্নয়ন: বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং সেই কেন্দ্রগুলোর মান উন্নয়ন করতে হবে।
৩. প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো প্রদান করে শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।
৪. বেতন ও সুযোগ-সুবিধা উন্নয়ন: ন্যায্য বেতন ও সুবিধা প্রদান করলে শ্রমিকরা কাজের প্রতি অধিক মনোযোগী হবেন এবং তাদের দক্ষতা বাড়বে।
৫. কর্মপরিবেশ উন্নয়ন: স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করা শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
৬. শিক্ষানবিসির সুযোগ বাড়ানো: কর্মক্ষেত্রে শিক্ষানবিসির সুবিধা প্রদান এবং নতুন কর্মীদের দক্ষ করার জন্য অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সাথে কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে।
৭. স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সহায়তা: শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নের জন্য কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসা ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৮. প্রণোদনা ও পুরস্কার ব্যবস্থা: দক্ষ শ্রমিকদের প্রণোদনা ও পুরস্কার প্রদান করে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করা যেতে পারে।
৯. মেন্টরিং ও নির্দেশনা: প্রতিটি কর্মস্থলে অভিজ্ঞ শ্রমিকদের মাধ্যমে নতুনদের জন্য মেন্টরিং ব্যবস্থা চালু করা শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
১০. কাজের সময়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা: কাজের সময়কে সুষ্ঠুভাবে বিভক্ত করে শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক চাপ কমাতে হবে, যাতে তারা বেশি দক্ষভাবে কাজ করতে পারেন।
১১. উন্নত মেশিনারিজ ও প্রযুক্তি: আধুনিক মেশিনারিজ ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
১২. কর্মসংস্থানের স্থায়িত্ব প্রদান: শ্রমিকদের কাজের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা প্রদান করলে তারা দীর্ঘমেয়াদী দক্ষতার দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন।
১৩. পর্যাপ্ত নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি: শ্রমিকদের নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া হলে তারা বেশি দায়িত্বশীল হবেন এবং নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ হবেন।
১৪. বিদেশি কর্মীদের জন্য কারিগরি জ্ঞান স্থানীয়করণ: বিদেশে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা দেশে ফিরে স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে।
১৫. সাংবাদিকতা ও প্রচারণা: শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা এবং প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে, যাতে তারা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরো উদ্যোগী হন।
Post a Comment