উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমানুল্লাহ ফেরদৌস ভিডিও কৃতজ্ঞতাঃ দেশ টিভি (Desh TV)
আমরা সবাই জানি, ১৯৯৩ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চশিক্ষায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২ হাজার ২৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে অধিভুক্ত করেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ ৩২ বছরে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করা হয় নি। এই শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে যতবারই আবেদন বা প্রতিবাদ করেছেন, ততবারই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদর্শন করেছে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। একই প্রতিষ্ঠানে এমপিও, নন-এমপিও সহকর্মীদের মধ্যে তো দ্বন্দ সবসসময় বিরাজমান। চলছে চরম বৈষম্য।
এই চরম বৈষম্য দূর করার একমাত্র উপায় হলো অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবশ্যই দায়িত্ব রয়েছে। সরকার বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো একটি কর্তৃপক্ষই এই এমপিওভুক্তির দায়িত্ব নিতে পারে, শুধু প্রয়োজন নীতিগত সিদ্ধান্তের।

তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ২৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র দুই শ কোটি টাকা, যা শিক্ষা খাতের উন্নয়ন বাজেটের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, বরাদ্দ করলেই অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিও দেওয়া সম্ভব। এমনকি ২০২২-২৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় না করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। সুতরাং, এমপিও প্রদানে কোনো আর্থিক সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে না।
দেশের বেসরকারি কলেজগুলোয় উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি অল্প কয়েকজন অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষক রয়েছেন। এই শিক্ষকদের মোট সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার হতে পারে। বর্তমান বেতন স্কেলে প্রতি মাসে (৫০০০ * ২৩,৫০০) বা ১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং বার্ষিক ১৪১ কোটি টাকা খরচ হবে। বিভিন্ন সুবিধা যোগ করলে এ খরচ ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হলে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই পরিমাণ অর্থ জোগাড় করলেই অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিও দেওয়া সম্ভব।
সমন্বিত আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দুটি ডিও লেটার সংগ্রহ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুটি সুপারিশ, ডিজি মহোদয়ের সুপারিশ, এবং হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায় পাওয়ার পরও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ২০১৮ সালে এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটি জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছিল। ২০২৩ সালে শিক্ষামন্ত্রী এবং উপাচার্য আশার আলো দেখালেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে ৩২ বছর ধরে শোষিত শিক্ষকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও দায় এড়াতে পারে না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আয় প্রায় ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, অথচ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওর জন্য প্রয়োজন মাত্র দুই শ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সদিচ্ছা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই এমপিও প্রদান করতে পারে। এমনকি বেসরকারি কলেজের ২৮ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক ৬০ টাকা করে সংগ্রহ করলেও এমপিও দেওয়া সম্ভব। যদি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ লাখ হয়, তাহলে মাসিক ১০০ টাকা সংগ্রহ করলেই হবে। অথচ বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫০০ টাকা বা তারও বেশি, তাই এই অর্থ সংগ্রহ কোনো সমস্যাই নয়।
একটি জাতি যদি তার শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান না দেয়, মূল্যায়ন না করে, তবে সেই জাতি কখনোই উন্নতি করতে পারে না। সুতরাং, জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত করা সরকার এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক দায়িত্ব। অনতিবিলম্বে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে উদাত্ত আহ্বান করছি।
Post a Comment